Cycas (সাইকাস) এর শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যঃ
* উদ্ভিদ খাড়া পাম জাতীয়।
* শুধুমাত্র পুং উদ্ভিদের মাথায় স্ট্রোবিলাস সৃষ্টি হয়।
* কচি পাতা ফার্নের মতো কুণ্ডলিত থাকে।
* গৌণ অস্থানিক কোরালয়েড মূল বিদ্যমান।
* গর্ভাশয় না থাকায় এদের ফল সৃষ্টি হয় না, বীজ নগ্ন অবস্থায় থাকে।
* এরা অসমরেণুপ্রসূ বা হেটারোস্পোরাস (heterosporous); অর্থাৎ যৌন জননে মেগা ও মাইক্রোস্পোর সৃষ্টি হয়।
* শুক্রাণু বহু ফ্ল্যাজেলাবিশিষ্ট, এর শুক্রাণু উদ্ভিদজগতে বৃহত্তম।
cycas এর শ্রেণীবিন্যাসঃ
Kingdom: Plantae
Division : Cycadophyta
Class : Cycadopsida
Order :Cycadales
Family: Cycadaccae
Genus: Cycas
প্রাপ্তিস্থান : Cycas গ্রীষ্মমন্ডল ও তদসংলগ্ন অঞ্চলের উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদ অস্ট্রেলিয়া, মাদাগাস্কার, চীন, জাপান, ভারত ও বাংলাদেশে বিস্তৃত। বাংলাদেশে Cycas গণের মধ্যে Cycas peclinata কেই সাধারণত চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখা যায়। তবে এদেশে C circinalis এবং Crevoluta-কে সুদৃশ্য পাতার জন্য অনেক বাগানেও বাহারী উদ্ভিদ হিসেবে লাগানো হয়। এর পাতা গৃহের সাজসজ্জার জন্য ব্যবহৃত হয়।
গঠন : Cycas এর দেহ স্পোরোফাইট। স্পোরোফাইট মূল, কান্ড ও পাতায় বিভেদিত। কান্ড অশাখ (candex), খাড়া, বেলনাকার (cylindrical), কাষ্ঠল, অনেকটা খেজুর গাছের মত। কান্ডপাত্র পত্রমূল দিয়ে আচ্ছাদিত এবং অমসৃণ। পাতা কান্ডের অগ্রভাগে মুকুটের মত অবস্থান করে। প্রতিটি পাতা পক্ষল, যৌগ। কান্ডের মাথায় যৌগপত্রগুলি সর্পিলাকারে সজ্জিত থাকে। কচি পাতা ফার্ণের মত কুন্ডলিত মুকুল পত্রবিন্যাসযুক্ত (circinate vernation)। কচি পাতায় গায়ে বাদামী বর্ণের শঙ্কপত্র দেখা যায়। পত্রখন্ড চর্মবৎ ও সবুজ বর্ণের। পত্রখন্ডে একটি মাত্র মধ্যশিরা থাকে, কোন প্রকার শিরা বা উপ-শিরা স্পষ্ট থাকে না।
Cycas এর প্রধান মূল আছে। প্রধান মূল থেকে ছোট ছোট শাখামূল বের হয়। এগুলি মাটির কাছাকাছি এসে দাম্র শাখান্বিত ও ঘন সন্নিবিষ্ট হয়। এদরকে কোরালয়েড মূল (coralloid root) বলে। প্রকৃত পক্ষে শাখামূল ঘড়ঘড়প নামের নীলাভ সবুজ শৈবাল অথবা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়ে কোরাল বা প্রবাল আকার ধারণ করে।
Cycas উদ্ভিদের বংশবৃদ্ধি প্রধানত দুপ্রকারে ঘটে—অঙ্গজ ও যৌন জনন প্রক্রিয়া
১. অঙ্গজ জনন (Vegetative reproduction): Cycas - এর কান্ডের গোড়া থেকে সৃষ্ট (মুকুল) অথবা শল্কপত্রের অক্ষ থেকে সৃষ্ট বুলবিল (bulbil) অন্যত্র রোপন করলে তা পূর্ণাঙ্গ নতুন উদ্ভিদে পরিণত হয়
২. যৌন জনন : Cycas ভিন্নবাসী অর্থাৎ স্ত্রীউদ্ভিদ এবং পুংউদ্ভিদ পৃথক। পুংউদ্ভিদের মাথায় অবস্থিত চ্যাপ্টা ও শঙ্কের মতো পুংরেণুপত্র বা মাইক্রোস্পোরোফিল সৃষ্টি হয় । (অসংখ্য মাইক্রোস্পোরোফিল ঘনভাবে সন্নিবেশিত হয়ে একটি মোচাকৃতির পুংস্ট্রোবিলাস গঠন করে। প্রতিটি মাইক্রোস্পোরোফিল দৈর্ঘ্যে ৩-৫ সে.মি. এবং প্রস্থে ১২-২৩ মি.মি. হয় ।এটি কাইন, চ্যাপ্টা ও কালকাকার (wedge shaped)। এর গোড়ার অংশ সূক্ত ও প্রান্তের অংশ চওড়া। এর প্রান্তভাগে MA অ্যাপোফাইসিস নামক একটি বিজ্ঞাকার গঠন থাকে। মাইক্রোস্পোরোফিলের পৃষ্ঠদেশে বহু স্পোরাঞ্জিয়া (একবচন পোরাডিয়াম) তৈরি করে। ২-৫টি লিয়া একত্রে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে। এদের প্রতি দলকে সোরাস (sorus) বলে। স্পোরাঞ্জিয়ামের অভ্যন্তরে স্পোরমাতৃকোষ সৃষ্টি হয়। প্রতি স্পোরমাতৃকোষ মিয়োসিস কোষ বিভাজনে হ্যান্ড্রয়েড পুংরেণু সৃষ্টি করে। এরপর হ্যাপয়েড পুংরো হতে বহু ফ্ল্যাজেলাযুক্ত শুক্রাণু ষ্টি হয় । Cycas-এর শুক্রাণু উদ্ভিদজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় শুক্রাণু অপরদিকে স্ত্রীরেণুপত্রগুলো বা মেগাস্পোরোফিল কোন স্ট্রোবিলাস আকারে থাকে না তবে সর্পিলাকারে সজ্জিত হয়ে মিরটী তৈরি করে। প্রতিটি মেগাস্পোরোফিলে ২ থেকে ৪ জোড়া বহৎ লাল বর্ণের ডিম্বক megasporangis) থাকেন। পাকের ভেতরে আর্কিগোনিয়াম তৈরি হয় এবং এর অভ্যন্তরে ডিম্বাণু উৎপন্ন হয়।
নিষেক : উদ্ভিদ বায়ুপরাগী হওয়ায় পুংরেণু বায়ুবাহিত হয়ে স্ত্রী উদ্ভিদের ডিম্বকের অগ্রভাগের প্রকোষ্ঠে এসে পরে এবং পোলেন টিউব সৃষ্টি করে। পোলেন হিউবের ভেতরে শুক্রাণু তৈরি হয়। পোলেন টিউব হতে এই শুক্রাণু (n) আর্কিগোনিয়াছ ডিম্বাণুর (n) সাথে মিলিত হয়ে জাইগোট (2n) তৈরি করে। জাইগোট মুক্ত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে আদিক্ষণ বা প্রোগ্রমব্রিও (proembryo) সৃষ্টি করে। আদিভ্রূণ হতে ভ্রূণ সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ পরিণত হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। ডিম্বক পরিপক্ক হয়ে বীজে পরিণত হয়। বীজ রসালো, কমলা বা লাল বর্ণের। বীজ থেকে জন্ম নেয় নতুন Cycas উদ্ভিদ ।
Cycas-এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব -
*Cycas -কে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় । এর কচিপাতা ফুলের ভালা ও তোরণ সাজাতে ব্যবহৃত হয়।
*Cycas circinalis এর স্ফীতকল ও বীজ হতে বার্লি প্রস্তুত করা হয়। এর পাতার রস ব্যবহারে পাকস্থলির Cycadales পীড়া ও চর্মরোগের উপশম হয়
*Cycas revituta এর বীজ খাদা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
*Cycas-এর কাণ্ডের মজ্জা হতে মদ তৈরি করা হয়।
*Cyeas peerinara উদ্ভিদের কচিপাতা সবজি হিসেবে খাওয়া হয় ।
*Cycas-এর কোনো কোনো প্রজাতির বীজ হতে সাগু তৈরি হয় যা খাদ্য হিসেবে প্রচলিত ।
Cycas একটি জীবন্ত জীবাশ্ম (Living fossil): সুদুর অতীতে বিলুপ্ত কোন জীবের দেহ বা দেহাংশ বা কোন চিহ্ন প্রাকৃতিক উপায়ে পাললিক শিলায় প্রস্তরীভূত হয়ে সংরক্ষিত থাকলে তাকে “জীবাশ্ম" বলে অতীতে বিলুপ্তপ্রাপ্ত উদ্ভিদ যার নির্দেশন একমাত্র জীবাশো পাওয়া যায়, এর সাথে জীবন্ত কোন প্রজাতির সাদৃশ্য থাকলে উক্ত প্রজাতিকে জীবন্ত জীবাশ্ম বলে) Cycas উদ্ভিদ Cycacies বর্গের অন্তর্গত। মেসোজোয়িক যুগের শুরুতে (ট্রায়াসিক) Cycadales বর্গের Cycas -এর সমগোত্রীয় অসংখ্য উদ্ভিদ পৃথিবীব্যাপী ব্যাপক বিস্তৃত ছিল। মেসোজোয়িক যুগের শেষের দিকে (ক্রিটেসিয়াস) এদের অধিকাংশের বিলুপ্তি ঘটে এবং অনেকে জীবাশ্মে পরিণত হয়। Cycas বর্গের সাইকাসসহ সিটি গণের প্রায় ১০০টি প্রজাতির উদ্ভিদ এখনও পৃথিবীর বুকে টিকে আছে এবং এদের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই আদি প্রকৃতির। Cycas এর সমগোত্রীয় অধিকাংশ উদ্ভিদ জীবাশ্মে পরিণত হওয়ায় এবং ঐসব আমি উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যগুলো এদের দেহে বিদ্যমান থাকায় Cycas কে জীবন্ত জীবাশ্ম বলে।